অষ্টাদশ শতাব্দীতে ভারতচন্দ্রের আবির্ভাব এক যুগসন্ধির লগ্নে। একদিকে অস্তগামী মুঘল সাম্রাজ্য বর্গীর হাঙ্গামায় উৎপীড়িত সাধারণ মানুষ, অপরদিকে বিদেশী বণিকদের অনুকরনে বিলাস ব্যভিচারে ঐশ্বর্য ও আড়ম্বরের চাকচিক্য। এই বিপরীতধর্মী পটভূমিতে রচিত হয় ভারতচন্দ্রের ‛অন্নদামঙ্গল' কাব্য। বস্তুত তিনি মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের মধ্যবর্তী এক সময় আর্বিভূত হন। তাঁর কাব্য সৃষ্টিতে পরস্পর জড়িত হয়ে রয়েছে অস্তগামী ও উদীয়মান দুই যুগের প্রধান লক্ষনগুলি। চরিত্রচিত্তনের ক্ষেত্রে তিনি অভিনবত্ব দেখিয়েছেন। দেবাদিদেব মহাদেবের মহিমা ধুলিধূসরিত হয়েছে তাঁর কাব্যে। গ্রাম্য বালকদের সন্দেহ, উপহাস, শিবচরিত্রের কামোন্মত্ত রূপ তার মহিমাকে অনেকখানি অশোভন করে তুলেছে।
আরো পড়ুন: মনসামঙ্গল কাব্যধারায় নারায়ণ দেবের কৃতিত্ব
ঈশ্বরীপাটনী চরিত্রটি ধুলিধূসরিত মানুষের প্রতিনিধি হয়ে দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছে - 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে'। মধ্যযুগীয় ধারা অনুযায়ী দৈব্য নির্ভর কাব্যরচনা করতে বসেও ভারতচন্দ্র অনেক ক্ষেত্রেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। শুধু দৈব্য বিশ্বাসই তাঁর কাব্যে মুখ্য হয়ে ওঠেনি, আধুনিক জীবন জিজ্ঞাসা এবং মানবতাবাদী ভাবনার সূচনাও তাঁরই হাতে।
সেকারনেই কাব্যে বিষ্ণুর প্রতি ব্যাসদেবের উক্তি - “বিষ্ণুর দেখেছি গুন নন্দি করেছিল খুন।/কিঞ্চিত যোগ্যতা তার নাই॥”
এছাড়াও শব্দচয়ন সংস্কৃত ছন্দের সুচারু প্রয়োগ, অলংকারের আভিজাত্য প্রভৃতি মধ্যযুগীয় পরিমন্ডলের বা কাব্যধারার অনুরূপ হলেও চরিত্রচিত্রণ কাহিনী পরিবেশনের ক্ষেত্রে তাঁর গ্রন্থ আধুনিকতার লক্ষনাক্রান্ত। সর্বোপরি ভারতচন্দ্রের দেবী অন্নদা প্রতিহিংসা পরায়নতা নয় তিনি নিরন্নের অন্নদাত্রী। এভাবেই সমগ্র অন্নদামঙ্গল কাব্যে ভারতচন্দ্র মধ্যযুগীয় ঐতিহ্যকে বহন করেও আধুনিকতার দিকে প্রথমপদ নিক্ষেপ করেছেন এবং হয়ে উঠেছেন যুগসন্ধির কবি বা সন্ধিযুগের কবি।
এরকম আরো বিষয় জানতে যুক্ত হন আমাদের WhatsApp কমিউনিটিতে (এখানে ক্লিক করুন)