মনসামঙ্গল কাব্যের খ্যাতনামা কবি শিল্পী নারায়ন দেব। তার রচিত কাব্যের নাম 'পদ্ম পুরান' কাহিনী গ্রহণের ব্যাপারে নারায়ণের ঐতিহ্যকে অনুসরণে চেষ্টা করেছেন। কাব্যটি তিনটি খন্ডে বিভক্ত। ভাষা বেশ প্রাচীন। কাল সংক্রান্ত করলে পরিচয় না দিলেও বংশতালিকা থেকে অনুমান করা যায় কাব্যটি পঞ্চদশ শতকে।
সংস্কৃতজ্ঞপন্ডিত ছিলেন বলে কবি লোকে কাহিনী যে পৌরাণিক দেবদেবীর প্রতি বেশি দৃষ্টি দিয়েছেন। দেব কন্ঠে মহাভারত, শৈব পুরাণ, কুমার সম্ভব প্রভৃতি পৌরাণিক কাহিনীর উপাদান আছে। তোর কি আক্রমণে বিপর্যস্ত,- বিধ্বস্ত -উচচ নীচ সম্প্রদায় যে সংস্কৃতি সমন্বয় চেষ্টা করেছিল। সেই যুগ চেতনাটি স্বার্থ প্রতিফলন হল নারায়ণ দেবের এই কাব্য।
তাঁর কাব্যে পান্ডিত্যের সঙ্গে সরলতা ও স্বাভাবিকতায় এক অদ্ভুত সমন্বয় ঘটে। মানব চরিত্র স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের রূপায়নের তিনি অসামান্য দক্ষ শিল্পী। এক একটি ঘটনা কে উপস্থিত করে একটি বিশেষ মুহূর্ত সৃষ্টি করে চরিত্রের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যকে অসাধারণভাবে পরিস্ফুটিত করেছে।
এক কথায় প্রাচীন গ্রাম বাংলা মানুষের দুঃখ- সুখ ,হাসি -কান্না ভরা জীবনে সার্থক রূপকার। তিনি তারকার বন্ধন, লক্ষিন্দরের বাসর ঘরে হাস্যকৌতুক, চাঁদের বাণিজ্য যাত্রা, নানা দেশে ও নদী বিবরণ, নানা স্বর্গের বিবরণ, পল্লী বাংলার মানুষের সুখ দুঃখ প্রকৃতি সামাজিক রীতি নীতিতে এই কাব্যটি পরিপূর্ণ।
চরিত্র নির্মিতে অতি অসামান্য শিল্প। চাঁদ সওদাগরের পুরুষ কার, দৃঢ়-প্রত্যয় শীল ব্যক্তিত্ব, বলিষ্ঠ মনোভাব, বেহুলা শান্ত, স্নিগ্ধ কুল বধূর দৈব শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামশীল বীরাঙ্গণা রূপ চরিত্র রক্তমাংসের সজীব প্রাণ বন্ধু চরিত্ররূপে পরিগণিত করেছে। কাব্যটি যেন করুণ রসের আকর। বেহুলার করুন মনোভাব পাঠকের হৃদয়ের সহানুভূতি কেড়েছে।
তৎকালীন যুগ পরিবেশেও জীবন চেতনার যথার্থই বহিঃপ্রকাশ কবি বিকৃত রুচিসম্পন্ন অশ্লীলতার প্রয়োগও ঘটিয়েছে। এভাবে চরিত্র রূপায়ণের কাহিনী গ্রন্থনে জীবন রসের বৈচিত্র্যে ও কবিত্তেশক্তিতে নারায়ণ দেব অনবদ্য শিল্পী প্রতিভার চিরভাস্বর, তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে কবিকে ক্ষেমানন্দ, বাল্মিকী সঙ্গে নারায়ণ দেবকে সশ্রদ্ধভাবে স্মরণ করেছেন।
এরকম আরো বিষয় জানতে যুক্ত হন আমাদের WhatsApp কমিউনিটিতে (এখানে ক্লিক করুন)