যমুনা নদী - না এটি এলাহাবাদ প্রয়াগের বা বাংলাদেশের যমুনা নদী নয়। এটি নদীয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী যমুনা। নদীয়া জেলা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী মানুষের জেলা, তারা মহাপ্রভু কে শ্রীকৃষ্ণের দ্বিতীয় রূপ বলে মনে করতেন তাই নদীয়া জেলায় মহাপ্রভু ছিলেন - সঙ্গে ছিল যমুনা নদীও। হুগলি জেলার মুক্তবেনি ত্রিবেণী থেকে ত্রিবেণী অর্থাৎ মধ্যবেনি গঙ্গা এবং পূর্ব দিকের বেণীটি যমুনা ও পশ্চিম দিকের বেণীটি সরস্বতী নদী নামে পরিচিত।
বর্তমানে এই উৎসমুখটি পুরোপুরি ভাবে বিলীন। উৎস মুখের আর কোন চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যায় না। একটা সময় নদীয়া জেলার কাছাকাছি কুড়িয়া ঝিল ও মথুরা ঝিলের মাধ্যমে ভাগীরথীর সাথে যমুনার সংযোগ ছিল। তবে বর্তমানে উৎসমুখ নব সভ্যতার নিচে চাপা পড়ে গেছে। এই উৎসমুখ এখন পুরোদস্তুর শহর কল্যানী বা হরিণঘাটা। পশ্চিম দিকে সরস্বতী নদীর উৎস মুখ এটি। অপরদিকে যমুনা নদী ভাগীরথী থেকে দীর্ঘ ১০০ কিলোমিটার পথ প্রবাহিত হয়েছে। যমুনা নদীটির বর্তমান অবস্থা ভীষণ করুন। নদীটিকে কোথাও চাষের জমি, কোথাও বসতবাড়ি ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিয়েছে তবুও এখনো কোথাও কোথাও এই নদীর শান্ত স্নিগ্ধ জলের দেখা পাওয়া যায়। এই নদীর তীরবর্তী প্রায় সাড়ে চার লক্ষ হেক্টর কৃষি জমি ও বসতবাড়ি আছে যা প্রতিবছর বন্যায় বা তীব্র খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় কিছু পরিবেশ প্রেমী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই নদীটির সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে এই নদীটির সংস্কারের কাজ শুরু হয় নদী সংস্কারের এই অভিনব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নদীপাড়ের মানুষ ও পরিবেশপ্রেমী সংগঠন।
নদী সংস্কার হলে তাতে বাঁচবে নদীর জীব বৈচিত্র্য ও বাঁচবে নদী পাড়ের মানুষ। নদী সংস্কার হলো কিন্তু তবুও রয়ে গেল নানান প্রশ্ন.. নদীর শুধু একটি পাড় ই নয় প্রায় পুরো নদীটা নিয়েই চলছে মানুষদের অবৈধ দখল। যার ফলে নদী সংস্কারের পরেও নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নদীর বুকে কখনো তৈরি হয়েছে মাছের ভেড়ি আবার কখনো মাটি ফেলে আড়াআড়ি রাস্তা তৈরি হয়েছে। এইভাবে গোটা নদীটাকেই গ্রাস করে ফেলছে নদীর শেষ প্রান্ত অর্থাৎ ইছামতি ও যমুনা নদীর মোহনা। নদীটি এখন অতিকায়শূন্য হয়ে রয়েছে।
যমুনার মৃত্যুর সাথে সাথে আমাদের এই জেলা থেকে বিলীন হয়ে গেছে: বিদ্যাধরী , লাবণ্য মতি, সুবর্ণ মতি, স্বর্ণ, পদ্মা, বলদে ঘাটা, ঝোরা, সোনাই, চালুন্দিয়া, চৈতি।
নদী মানে কি শুধুই প্রবাহমান জলের স্রোত? না.. আসলে নদী মানে সভ্যতা, নদী মানে ভাষা, নদী মানে সমাজ, নদী মানে বাস্তুতন্ত্র। নদী মানে সংস্কৃতি এবং নদী মানে জীবন ধারা। সেই নদীকেই আমরা আজ অবহেলা করছি। সেই নদী আজ আমাদের জন্যই এই অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। আসলে এই সুজলা আর সুফলার শস্য শ্যামলা বাংলার আসল চাবিকাঠি ছিল এই নদী গুলির কাছে। আজ তারা বিপন্ন হওয়ার সাথে সাথে আমাদের সভ্যতাও কিন্তু বিপন্নতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।