বাংলা নাটকের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ

বাংলা নাটকের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ
বাংলা নাটককে দুইভাগে ভাগ করা যায় ১.অভিনয়, ২.রচনা
এবং বাংলা নাটকের যুগকে তিনভাগে ভাগ করা হয় ।
প্রথম যুগ — ১৮৫২ থেকে ১৮৭২ খ্রিঃ পর্যন্ত ।
দ্বিতীয় যুগ — ১৮৭২ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত ।
তৃতীয় যুগ — ১৯৪২ থেকে আজ পর্যন্ত ।
প্রথম বাংলা মৌলিক নাটক হল জি.সি.গুপ্তের—“কির্তীবিলাস" এবং তারাচরণ সিকদারের —“ভদ্রার্জুন" এগুলি প্রকাশিত হয় ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে।

প্রথম যুগের প্রধান নাট্যকার হলেন — রামনারায়ণ তর্করত্ন, মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র ।
প্রথম যুগের অপ্রধান নাট্যকার ও নাটক হল —
জি. সি. গুপ্ত — ১৮৫২ — “কীর্তিবিলাস"।
তারাচরণ সিকদার — ১৮৫২ — “ভদ্রার্জুন"।
কালীপ্রসন্ন সিংহ — ১৮৫৩ — “বাবু"।
উমেশচন্দ্র মিত্র — ১৮৫৬ — “বিধবাবিবাহ"।
হরচন্দ্র ঘোষ — ১৮৫৩ — “ভানুমতী চিত্রবিলাস"।
হরচন্দ্র ঘোষ (2) — ১৮৬৪ — “চারুমুখ চিত্তহরা"।


এবার আমরা অভিনয়, বিষয়ে কিছু অবগত হতে পারি
গেরাসিম লেবেডফ নামক একজন রাশিয়ান ভদ্রলোক কলকাতার লালবাজারের কাছে একটি অস্থায়ী রঙ্গমঞ্চ তৈরি করেন। তিনি দুটি ইংরেজি নাটকের বঙ্গানুবাদ করান ।
সেগুলি হল —
 The disguise , এবং Love is the best doctor.
গোলোকনাথ দাস এই দুটির অনুবাদ করেছিলেন। ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর এই নাটক দুটি অভিনীত হয়। এগুলি হল বাংলাদেশে প্রথম অভিনীত ইংরেজি নাটক। লেবেডফের থিয়েটারটির পরে নাম হয় - “বেঙ্গলী থিয়েটার "।
বাংলা নাটকের উৎকর্ষের জন্য সেই সময়ের ‘সখের নাট্যশালা’ গুলিরও ভূমিকা যথেষ্ট রয়েছে ।১৮৭২-এর আগে সখের নাট্যশালা স্থাপিত হয়েছিল। ১৭৯৫ খ্রিঃ লেবেডফ ‘বেঙ্গলী থিয়েটার ’ নির্মাণ করেন।
এছাড়াও আরও কয়েকটা সখের নাট্যশালা হল —
নবীনচন্দ্র বসুর —শ্যামবাজারের নাট্যশালা ।
প্রসন্নকুমার ঠাকুরের —হিন্দু থিয়েটার ।
কালীপ্রসন্ন সিংহের —বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ ।
পাইকপাড়ার রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহের —বেলগাছিয়া মঞ্চ।

নাটকের ২য় যুগ ~ বাংলা নাটকের ২য় যুগ বলা হয় ৭ই ডিসেম্বর ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দকে।কারণ,ঐ দিনই প্রথম ‘Public Theatre ’স্থাপিত হয়। এবং মেয়েরাও অভিনয়ে নামল।এবং সাধারণ মানুষেরাও নাটকের রসাস্বাদন করার সুযোগ পেল । এই যুগের নাট্যকাররা হলেন ~ গিরীশচন্দ্র ঘোষ (১৮৪৪ - ১৯১১), জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৪৯ - ১৯২৫), অমৃতলাল বসু (১৮৫৩ - ১৯২৯), দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩ - ১৯১৩), ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ(১৮৬৩ - ১৯২৭), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ( ১৮৬১ - ১৯৪১)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নাটকে সংগীতের ব্যবহার করেছিলেন। যেমন ‘রাজা' নাটকে বলেছেন —হাত দিয়ে দ্বার খুলবো না গো,গান দিয়ে দ্বার খোলাব।

রবীন্দ্রনাথ প্রথম দেখালেন নাটক একটি সূক্ষ্ম কলারূপ। এরপর দেখে নেব রবীন্দ্র পরবর্তী  বিখ্যাত নাট্যকারদের নাম  —
♦ মন্মথ রায় (১৮৯৯ - ১৯৮৮)
♦ শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত(১৮৯২ - ১৯৬১)
♦ মহেন্দ্র গুপ্ত ( ১৯১০ - ১৯৮৪)
♦ বিধায়ক ভট্টাচার্য্য ( ১৯১০ - ১৯৮৬)
♦ নিশিকান্ত বসুরায়
♦ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৮৯৮ - ১৯৭১)
♦ শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ( ১৮৯৯ - ১৯৭০)
♦ প্রমথনাথ বিশী ( ১৯০১ - ১৯৮৫)
♦ জলধর চট্টোপাধ্যায় ( ১৮৯৬ - ১৯৬৮)
♦ মনোজ বসু ( ১৯০১ - ১৯৮৭)
♦ সলিল সেন , ইত্যাদি।

বাংলা নাটকের তৃতীয় যুগ ~  ১৯৪২ খ্রিঃ থেকে আজ পর্যন্ত সময়কে বলা হয় বাংলা নাটকের তৃতীয় যুগ ।এই যুগের নাট্যকার হলেন — তুলসী লাহিড়ী, বিজন ভট্টাচার্য্য। এই যুগের শ্রেষ্ঠ নাটক হল — 
“ছেঁড়া তার" — তুলসী লাহিড়ী।
“নবান্ন" — বিজন ভট্টাচার্য্য।
এই যুগের নাট্যকারদের নাটকে সাধারণ মানুষের জীবন-সমস্যাই বেশি রূপ পেয়েছে। কৃষক,শ্রমিক,বস্তিবাসী,ঝুপড়িবাসী,প্রভৃতি চরিত্র নাট্যকারের সহানুভূতির স্পর্শে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
🔘আধুনিক যুগের বাংলাদেশে নবনাট্য আন্দোলনের যে সূত্রপাত তার প্রথম প্রকাশ বিজন ভট্টাচার্য্যের নাটকের মধ্যে।তাই এই শ্রেণির নাটক রচনার পথিকৃৎ তিনিই।
🔘বিজন ভট্টাচার্য্যের এই শ্রেণির নাটকের দ্বারাই তাঁর ও তাঁর পরবর্তী নাটকের ধারা জনজীবনের সঙ্গে হার্দিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল।

-অনসূয়া গুপ্ত
নবীনতর পূর্বতন